শিরকের অর্থ ও পরিচয়

0
(0)

শির্ক (شِرْك) অর্থ অংশীদার হওয়া (to share, participate, be partner, associate)। ইশরাক (إشراك) ও তাশ্রীক (تَشْرِيك) অর্থ অংশীদার করা বা বানানো। ‘শির্ক’ শব্দটিও ‘অংশীদার করা’ বা ‘সহযোগী বানানো’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহর প্রাপ্য কোনো ইবাদাত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য পালন করাকে শিরক বলা হয়। কুরআনের ভাষায় কাউকে ‘আল্লাহর সমতুল্য’ করাই শিরক। আল্লাহ বলেন:

فَلا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

অতএব তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমতুল্য বানাবে না।’’[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন,

سَأَلْتُ أَوْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَيُّ الذَّنْبِ عِنْدَ اللَّهِ أَكْبَرُ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ

‘‘আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে কঠিন পাপ কী? তিনি বলেন: সবচেয়ে কঠিন পাপ এই যে, তুমি আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’’[2]

তাহলে কাউকে আল্লাহর ‘নিদ্দ’ মনে করাই শিরক। আরবীতে ‘নিদ্দ’’ (الندّ) অর্থ সমতুল্য, মত বা তুলনীয়। কাউকে নাম, বিশেষণ, প্রতিপালন বা ইবাদাতের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সমতুল্য মনে করা, আল্লাহকে যে ভক্তি প্রদর্শন করা হয় বা আল্লাহর জন্য যে ইবাদাত করা হয় তা অন্য কারো জন্য করাই শিরক।[3]

দুভাবে মানুষ শিরকে নিপতিত হয়: (১) আল্লাহর কোনো সৃষ্টির প্রতি অতি-সুধারণা অথবা (২) মহান আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা বা অবধারণা। মুশরিকগণ কখনো ফিরিশতা, নবী, ওলী, পাহাড়, সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদি কোনো সৃষ্টির বিষয়ে ভক্তিতে অতিরঞ্জন করে তাদের মধ্যে অলৌকিক ক্ষমতা কল্পনা করেছে। অথবা আল্লাহর পূর্ণতার গুণের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করে তাঁকে সৃষ্টির মতই পরিষদ প্রভাবিত বলে কল্পনা করেছে।

বৈধ ভক্তি-শ্রদ্ধা থেকেই শিরকী অতিভক্তির জন্ম। পিতামাতা, উস্তাদ, পীর ও গুরুজনদের সর্বোচ্চ মানবীয় ভক্তিশ্রদ্ধা করতে হবে। কিন্তু যখনই উক্ত ব্যক্তির মধ্যে অলৌকিক শক্তি বা মঙ্গল-অমঙ্গলের ক্ষমতা কল্পনা করা হয় তখনই শিরক শুরু হয়। মহান আল্লাহ পিতামাতা বা নেককার মানুষের দুআ কবুল করেন। তবে তাঁদের দুআ নির্বিচারে গ্রহণ করেন, তাঁদেরকে অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন অথবা তাঁদের দুআর মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর কাছে কিছু পাওয়া যাবে না মনে করা থেকে শিরকের যাত্রা।

তাওহীদের মত শিরকও দু প্রকারের হতে পারে: (১) রুবূবিয়্যাতে শিরক এবং (২) ইবাদাতে শিরক। আল্লাহ সব কিছু জানেন, দেখেন, শুনেন, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সৃষ্টির কল্যাণ-অকল্যাণ তাঁরই হাতে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো মধ্যে এ সকল গুণ আছে বা আল্লাহ কাউকে এরূপ ক্ষমতা প্রদান করেছেন বলে বিশ্বাস করা রুবুবিয়্যাতের শিরক। ‘ইবাদত’-এর ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বলে বিশ্বাস করা বা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করা ‘ইবাদাতের শির্ক’। উভয় প্রকারের শিরক পরস্পরে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কোনো সৃষ্টি বা মাখলূকের মধ্যে অলৌকিক ক্ষমতা বা ঐশ্বরিক শক্তি বিদ্যমান থাকার ধারণা থেকেই তাঁর প্রতি অলৌকিক ভক্তি, প্রার্থনা, সাজদা, মানত, উৎসর্গ, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি শিরকের জন্ম হয়।

[1] সূরা (২) বাকারা: ২২ আয়াত।

[2] বুখারী, আস-সহীহ ৪/১৬২৬, ৫/২২৩৬, ৬/২৪৯৭ (কিতাবুত তাফসীর, সূরাতুল বাকারা, বাব ফালা তাজআলু…) মুসলিম, আস-সহীহ ১/৯০-৯১ (কিতাবুল ঈমান, বাবু কওনিশ শিরকি আকবাহুয যুনূব, ভারতীয় ছাপা ১/৬৩)

[3] তাবারী, তাফসীর (জামিউল বায়ান) ১/১৬৩-১৬৪।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

As you found this post useful...

Follow us on social media!