৪) في الطاعة الشرك আনুগত্যের মধ্যে শিরক (শেষ অংশ)

0
(0)

৪) في الطاعة الشرك আনুগত্যের মধ্যে শিরক (শেষ অংশ)

আগের চলমান পাতার শেষ অংশ…

 

বর্তমানে অনেক মুসলিম দেশই প্রচলিত মানব রচিত রীতিনীতি, বিধি-বিধান ও প্রথাকেই আইনের উৎস হিসাবে নির্ধারণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুধু পারিবারিক জীবনের সাথে সংশিস্নষ্ট কিছু বিধি-বিধান বাকী রেখে ইসলামী শরী‘আতের বাকি সব হুকুম-আহকাম বাতিল করে দিয়েছে। এদের কাজ-কর্ম তাতারীদের মতোই। কুরআনের অনেক আয়াত এদের কাজকে কুফুরী প্রমাণ করে।

 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْكَافِرُونَ﴾

যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফের। (সূরা আল মায়েদা: ৪৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً﴾

‘‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতোক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে’’। (সূরা আন নিসা: ৬৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴾

‘‘তাহলে কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের উপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত হবে এবং আখিরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে? তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন’’। (সূরা আল বাকারা: ৮৫)

আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, আকীদা ও দীন হিসাবে ইসলামী শরী‘আতকেই কবুল করে নেয়া আবশ্যক। মানব সমাজে শুধু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই নয়; বরং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত মনে করেও কুরআন ও সুন্নাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।

সুতরাং বান্দার উপর আল্লাহর বিধান কবুল করে নেয়া অপরিহার্য। এটি তার পক্ষে যাক অথবা বিপক্ষে যাক। এতে তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ হোক বা না হোক।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً﴾

‘‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে’’। সূরা আন নিসা: ৬৫।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا﴾

‘‘আল্লাহ এবং তার রসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রসূলের বিরোধীতা করবে, সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে পতিত হবে’’। (সূরা আহযাব: ৩৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ  لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾

‘‘এখন যদি তারা তোমার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রেখো, তারা আসলে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ এ ধরনের যালেমদেরকে কখনো সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না’’। (সূরা আল কাসাস: ৫০)

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ

‘‘তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত আদর্শের অধীন হয়’’।[6]

ইমাম ইবনে রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছের অর্থ হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ হতে যেসব আদেশ-নিষেধ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি বান্দার পছন্দ ও ভালোবাসা অনুগত না হলে সে কখনো পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।

সুতরাং বান্দার উপর আবশ্যক হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করার আদেশ করেছেন, তাকে ভালোবাসবে এবং রসূল যে কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তাকে অপছন্দ করবে। এ অর্থে কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে। সেখানে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকের নিন্দা করেছেন, যারা আল্লাহ তা‘আলার পছন্দনীয় বিষয়কে অপছন্দ করে এবং তার অপছন্দনীয় জিনিসগুলোকে পছন্দ করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ﴾

‘‘এটি এ জন্য যে, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে তারা তার অনুসরণ করেছে এবং তার সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। এ কারণে তিনি তাদের সব কাজ-কর্ম বরবাদ করে দিয়েছেন’’। (সূরা মুহাম্মাদ: ২৮)

ইবনে রজব রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের একাধিক স্থানে মুশরিকদেরকে প্রবৃত্তির অনুসরণকারী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ  لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾

‘‘এখন তারা যদি তোমার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রেখো, তারা আসলে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে কখনো হিদায়াত করেন না’’। (সূরা কাসাস: ৫০)

শরী‘আতের উপর নিজস্ব প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেয়া থেকেই যেহেতু বিদআতের সূচনা হয়, তাই বিদআতীদেরকেও আহলুল আহওয়া তথা প্রবৃত্তির পূজারী বলা হয়। ঠিক এমনি আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা ও তিনি যা ভালোবাসেন তার উপর প্রবৃত্তির চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়া থেকেও পাপাচারের উৎপত্তি হয়।

অতএব মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন রসূলের আনীত দীন ও সুন্নাতের অনুগামী হয়। সুতরাং মুমিনদের উপর আবশ্যক হলো, আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে ভালোবাসেন, তারা যেন তাদেরকে ভালোবাসে। তারা যেন ফেরেশতা, নবী-রসূল, সিদ্দীকীন, শহীদগণ এবং সকল সৎকর্মশীল ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসে। ইবনে রজব রাহিমাহুল্লাহর কথা এখানেই শেষ।


[6]. ইমাম আলবানী (রহি.) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। তবে তার মর্মার্থ সঠিক। দেখুন: শাইখের তাহকীকসহ ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’, হা/১৬৭।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

As you found this post useful...

Follow us on social media!