কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (৫ম [শেষ] পর্ব)
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (৫ম [শেষ] পর্ব)
বিভিন্ন সৎ আমলের মাধ্যমে যেমন মানুষের ঈমান বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানাবিধ কারণে ঈমান
কমে যায়। যেসব কারণে ঈমান কমে যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হ’ল-
(১) অজ্ঞতা :
এটি ঈমান হ্রাসের অন্যতম কারণ। ইলম যেমন ঈমান বৃদ্ধি করে, অজ্ঞতা তেমনি
ঈমান হ্রাস করে। মানুষ যত বেশী কল্যাণকর বিদ্যা অর্জন করবে তার ঈমান তত
বেশী বাড়বে।
অজ্ঞতার কারণে আজকে বিশ্বে মানুষের এত অধঃপতন। কেননা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল আল্লাহ সম্পর্কে জানা। এজন্য তাওহীদ বুঝতে
হবে। কারণ তাওহীদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে আজকে অধিকাংশ মানুষ
বিভিন্ন ধরনের শিরকে লিপ্ত হচ্ছে। কবর পূজাকে বড় ইবাদত মনে করছে। কবরে
রুকূ-সিজদা, যবেহ, কুরবানী, মানত, দো‘আ, সাহায্য প্রার্থনা, বরকত চাওয়া
প্রভৃতি শিরকী আমল করছে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া
বিদ‘আতী কর্মের তো শেষ নেই। ওরস, মীলাদুন্নবী, শবে মে‘রাজ, শবে বরাত পালন,
ফরয ছালাতের পরে জামা‘আতবদ্ধ ভাবে দো‘আ করা, মৃত ব্যক্তির নামে চল্লিশা,
কুরআন খতম, এগুলো সবই মানুষ করছে অজ্ঞতার কারণে। আর এভাবে মানুষের ঈমান
কমছে। উল্লেখ্য যে, হাতে, গলায়, কোমরে তাবীয ঝুলানো, বাত ভাল হবার
উদ্দেশ্যে হাতে লোহার বালা পরা, লাল সুতা পরা, অন্যের নামে কসম খাওয়া,
মানুষ দেখানো আমল করা ইত্যাদি সকল কাজ অজ্ঞতার কারণেই করছে। যা মানুষের
ঈমান নষ্ট করে দেয়। এর ফলে পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই অজ্ঞতা দূর
করতে হবে এবং মানুষের মধ্যে ইলমের প্রসার ঘটাতে হবে। কেননা অজ্ঞতাই হচ্ছে
পাপে পতিত হওয়ার সর্ববৃহৎ কারণ। মহান আল্লাহ বলেন,وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْ
إِسْرَائِيْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُوْنَ عَلَى
أَصْنَامٍ لَّهُمْ قَالُوْا يَا مُوْسَى اجْعَل لَّنَا إِلَـهاً كَمَا
لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ ‘আমরা সাগর পার করে
দিয়েছি বনী ইসরাঈলকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছল, যারা
নিজ হাতে নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা!
আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি
বললেন, তোমরা বড়ই অজ্ঞ সম্প্রদায়’ (আ‘রাফ ৭/১৩৮)।
অন্যত্র
আল্লাহ বলেন, وَلُوْطاً إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ
وَأَنتُمْ تُبْصِرُوْنَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً
مِّن دُوْنِ النِّسَاء بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ- ‘স্মরণ কর লূতের
কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ, অথচ এর পরিণতির
কথা তোমরা অবগত আছ? তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত
হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়’ (নামল ২৭/৫৪-৫৫)। মহান আল্লাহ
তাঁর নবীকে বলেন,قُلْ أَفَغَيْرَ اللهِ تَأْمُرُوْنِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا
الْجَاهِلُوْنَ ‘বল, হে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের
ইবাদত করতে আদেশ করছ?’ (যুমার ৩৯/৬৪)।
এভাবে যে আল্লাহর
বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং পাপ কাজ করবে সে মূর্খ। তার এ অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ
কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে বিনীতভাবে তওবা করতে
হবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ
يَعْمَلُوْنَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ
فَأُوْلَـئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللهُ عَلِيْماً
حَكِيْماً ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ
করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে। এরাই হ’ল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা
করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ’ (নিসা ৪/১৭)। তিনি আরো
বলেন, وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلاَمٌ
عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَن
عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْءاً بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ
فَأَنَّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘আর যখন তারা তোমাদের কাছে আসবে যারা আমাদের
নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করে, তখন তুমি বলে দিও, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত
হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের
মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে
যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়’ (আন‘আম ৬/৫৪)। মহান
আল্লাহ আরো বলেন, ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ عَمِلُوْا السُّوءَ
بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوْا إِنَّ
رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ
কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা
এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (নাহল ১৬/১১৯)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যত প্রকার পাপ করা হয় তা
(শরী‘আতের সঠিক জ্ঞান থেকে) অজ্ঞ থাকার কারণেই সংঘটিত হয়। সেটি ইচ্ছাকৃত
হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হোক।[1]
মুজাহিদ বলেন,
مَنْ عَصَى اللهَ فَهُوَ جَاهِلٌ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْ مَعْصِيَتِهِ
আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি মূর্খ। যতক্ষণ না সে তার পাপাচার
থেকে দূরে থাকে।[2]
(২) আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া ও ভুলে যাওয়া :
মানুষ
যখন আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় এবং তাঁকে ভুলে যায়, তখন মানুষের
ঈমান কমে যায়। আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফলতি করা মুনাফিক ও কাফেরদের চরিত্র।
মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْراً مِّنَ الْجِنِّ
وَالإِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لاَّ يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ
لاَّ يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُوْنَ بِهَا
أُوْلَـئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـئِكَ هُمُ
الْغَافِلُوْنَ ‘আর আমরা সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ।
তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না। তাদের চোখ রয়েছে, তার
দ্বারা দেখে না। আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ
জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হ’ল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)।
তিনি আরো বলেন, إَنَّ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءنَا وَرَضُوْا
بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ
آيَاتِنَا غَافِلُوْنَ، أُوْلَـئِكَ مَأْوَاهُمُ النُّارُ بِمَا كَانُوْا
يَكْسِبُوْنَ- ‘অবশ্যই যেসব লোক আমাদের সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং
পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা
আমার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গাফিল। এমন লোকদের ঠিকানা হ’ল আগুন সেসবের বদলা
হিসাবে যা তারা অর্জন করছিল’ (ইউনুস ১০/৭-৮)। তিনি অন্যত্র
বলেন,فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً
وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ ‘অতএব
আজকের দিনে সংরক্ষণ করছি আমরা তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য
নিদর্শন হ’তে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমাদের মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য
করে না’ (ইউনুস ১০/৯২)।
মানুষ আজ দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
পড়েছে এবং তার আসল ঠিকানা পরকালকে ভুলে গেছে। মহান আল্লাহ
বলেন,يَعْلَمُوْنَ ظَاهِراً مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ
الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ ‘তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং
তারা পরকালের খবর রাখে না’ (রূম ৩০/৭)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে
সম্বোধন করে বলেন,وَاذْكُر رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيْفَةً
وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن
مِّنَ الْغَافِلِيْنَ ‘আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে
ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং অনুচ্চ স্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর
গাফেল হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। মহান আল্লাহ যিকিরের মাধ্যমেই
মানুষ বেঁচে থাকে, এর বিপরীত করলে অন্তর মরে যায়। মুমিনের উচিৎ ভাল কাজের
দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া। পরকালের জন্য, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য আমল
করা। আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ না হওয়া। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়,
তারা নিজের উপর যুলুম করে। এর পরিণতি খুব ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ
أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا
مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ ‘যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার
আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার
চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব’ (সাজদাহ ৩২/২২)।
যারা
আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা হিদায়াতের পথ থেকে অনেক দূরে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ
فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَى
قُلُوْبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوْهُ وَفِيْ آذَانِهِمْ وَقْراً
وَإِنْ تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَى فَلَنْ يَهْتَدُوْا إِذاً أَبَداً ‘তার
চাইতে অধিক যালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর
সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্ম সমূহ ভুলে যায়? আমরা
তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তারা না বোঝে এবং তাদের কানে
রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই
তারা সৎপথে আসবে না’ (কাহফ ১৮/৫৭)। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ
তারা উভয় জীবনে দুর্বিষহ জীবন যাপন করবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ
أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنكاً وَنَحْشُرُهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার
জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব’ (ত্ব-হা ২০/১২৪)।
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ তার সাথী হবে শয়তান। মহান আল্লাহ
বলেন,وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً
فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬)।
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ তার কঠিন শাস্তি হবে। মহান আল্লাহ
বলেন,كَذَلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ وَقَدْ
آتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْراً، مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ
يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْراً- ‘এমনিভাবে আমরা পূর্বে যা ঘটেছে,
তার সংবাদ তোমার কাছে বর্ণনা করি। আমরা আমাদের কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি
পড়ার গ্রন্থ। যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কিয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে’ (ত্ব-হা ২০/৯৯-১০০)। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হ’তে বিমুখ হয় তিনি তাকে কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন (জিন ৭২/১৭)।
সুতরাং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তাঁর যিকির-আযকার ও ইবাদতের মাধ্যমে
জীবন যাপন করতে হবে। কোন ক্রমেই তাকে ভুলে যাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ
বলেন, ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে স্মরণ করা ভুলে গেছে, ফলে
আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করেছেন। তারাই তো পাপাচারী’ (হাশর ৫৯/১৯)।
(৩) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া :
পাপ ও অন্যায়-অশ্লীল কাজের মাধ্যমে মানুষের ঈমান কমে। এমনকি সে ঈমান শূন্য
হয়ে যায়। তাই সকল পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর কেউ পাপ করে বসলে তার থেকে
পরিত্রাণের একমাত্র পথ হ’ল সাথে তওবা-ইস্তেগফার করা। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا
مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعاً إِنَّهُ
هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম
করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ
করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৪৩/৫৩)। তিনি আরো
বলেন,وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوْ عَنِ
السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ ‘তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা
কবুল করেন, পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত
রয়েছেন’ (শূরা ৪২/২৫)। তাই মানুষকে সকল শিরক-বিদ‘আত ও পাপাচার
থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহ’লে ইহলোকে কল্যাণ ও পরলোকে মুক্তি মিলবে। মানুষ
যত সৎ আমল করবে ততই তার ঈমান বাড়বে। আর যত বেশী পাপ কাজ করবে তার ঈমান কমতে
কমতে শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ
فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيْمَانًا فَأَمَّا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ،
وَأَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى
رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ ‘আর যখন কোন সূরা নাযিল হয়, তখন
তাদের মধ্যেকার কিছু (মুশরিক) লোক বলে, এই সূরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান
বৃদ্ধি করল? বস্ত্ততঃ যারা ঈমান এনেছে, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং
তারা আনন্দ লাভ করেছে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে রোগ আছে, এটি তাদের
নাপাকির সাথে আরও নাপাকি বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করেছে’ (তওবা ৯/১২৪-১২৫)।
কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে প্রমাণিত
হয় যে, পাপের মধ্যে ও ছোট-বড় রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ تَجْتَنِبُوْا
كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ
وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيْمًا ‘যদি তোমরা কবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত
থাক, তাহ’লে আমরা তোমাদের (ছোট খাট) ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং
তোমাদেরকে সম্মানজনক গন্তব্যে প্রবেশ করাব’ (নিসা ৪/৩১)। তিনি আরো
বলেন, اَلَّذِيْنَ يَجْتَنِبُوْنَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ
إِلاَّ اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ‘যারা বড় বড় গোনাহ ও
অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার
ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ)
হ’তে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ
وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ
مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত এবং এক
জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, এক রামাযান থেকে অপর রামাযান এর মাঝে যত গোনাহ করা
হয়, সবগুলির কাফফারাহ হয়। যদি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’।[3]
আবু
বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلاَ
أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ.
قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. وَكَانَ مُتَّكِئًا
فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ، أَلاَ
وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ. فَمَا زَالَ يَقُوْلُهَا حَتَّى
قُلْتُ لاَ يَسْكُتُ. ‘আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে খবর দিব
না? আমরা বললাম, অবশ্যই তা, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে
শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট
ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য
দেওয়া (দু’বার)। তিনি ক্রমাগত একথা বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে
হয় চুপ করবেন না।[4]
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে,
أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ
نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ. قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيمٌ، قُلْتُ ثُمَّ
أَىُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ.
قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ أَنْ تُزَانِىَ حَلِيلَةَ جَارِكَ. ‘কোন গুনাহ
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার
স্থাপন করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটাতো সত্যিই বড়
গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে
এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সাথে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর
কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত
হওয়া’।[5]
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)
হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ. قَالُوا يَا
رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ،
وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ
الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ،
وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‘সাতটি ধ্বংসকারী
বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকো। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলি কি
কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা, যাদু করা, আল্লাহ যাকে
হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা। সূদ
খাওয়া, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, রণাঙ্গন থেকে পলায়ন করা এবং অবলা-সরলা
সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া’।[6]
(৪) নাফসে আম্মারা :
‘নফস’ তিন প্রকার। (ক) নফসে মুত্বমাইন্নাহ-প্রশান্ত হৃদয়। (খ) নফসে
লাউয়ামাহ- তিরষ্কারকারী আত্মা অর্থাৎ বিবেক এবং (গ) নফসে আম্মারাহ অর্থাৎ
অন্যায় কাজে প্ররোচনা দানকারী অন্তর। শেষোক্ত অন্তরটি সর্বদা শয়তানের
তাবেদারী করে। এর সঙ্গে সর্বদা লড়াই করেই মুমিনকে হকের উপরে টিকে থাকতে হয়।
এ খারাপ নফস মানুষকে সর্বদায় অন্যায় পথের দিকে ডাকে, ধ্বংসের পথে আহবান
করে। আর এভাবে মানুষের ঈমান কমতে কমতে শূন্য হয়ে যায়। তাই এ খারাপ অন্তর
থেকে মহান আল্লাহর নিকট সর্বদা পরিত্রাণ চাইতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ
মিসরের শাসক আযীয-এর স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِيْ إِنَّ
النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ
رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না! নিশ্চয়ই মানুষের
মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয় আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন।
নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (ইউসুফ ১২/৫৩)। আল্লাহর
নিকট সর্বদাই সঠিক পথের থাকার তাওফীক চাইতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا
أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ
بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ
وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَداً وَلَكِنَّ اللهَ
يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো
শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া
তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হ’তে পারতে না। কিন্তু
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন’ (নূর ২৪/২১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,وَلَوْلاَ أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدتَّ تَرْكَنُ
إِلَيْهِمْ شَيْئاً قَلِيْلاً ‘আমরা তোমাকে দৃঢ়পদ না রাখলে তুমি তাদের
প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন’ (ইসরাঈল ১৭/৭৪)। তাই মানুষ যদি তার
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে চলে এবং আল্লাহ প্রদত্ত
হুকুম-আহকামের প্রতি লক্ষ্য রাখে, তাহ’লে অন্যায় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা
সম্ভব। সেই সাথে পরকালের জন্য আমরা কতটুকু আমল করছি সেটা অবশ্যই ভাবার
বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ
وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ
خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক
ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা।
আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন’ (হাশর ৫৯/১৮)।
আল্লাহর
ইবাদতের মাধ্যমে আত্মাকে জীবিত করতে হবে, ঈমান মুযবূত করতে হবে, ঈমান
বাড়াতে হবে, প্রশান্ত আত্মা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে, তাহ’লেই
পরকালে শান্তির স্থান জান্নাত লাভ করা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,يَا
أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ، ارْجِعِيْ إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً
مَّرْضِيَّةً، فَادْخُلِي فِيْ عِبَادِيْ، وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ- ‘হে
প্রশান্ত আত্মা! ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্ট চিত্তে ও সন্তোষভাজন
অবস্থায়। অতঃপর প্রবেশ কর আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ কর আমার
জান্নাতে’ (ফজর ৮৯/২৭-৩০)।
(৫) শয়তানের অনুসরণ :
শয়তান মানব জাতিকে সর্বদা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এমনকি
ছালাতের মাঝেও মানুষকে কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে মানুষের ঈমান
কমে যায়। তাই মানব জাতির উচিত আল্লাহর নিকট সর্বদা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে
বেঁচে থাকার জন্য পানাহ চাওয়া। কারণ শয়তান মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে
যায়। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ
عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُوْ حِزْبَهُ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحَابِ
السَّعِيْرِ ‘শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার
দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়’ (ফাতির ৩৫/৬)। শয়তান
মানুষের চির শত্রু। মহান আল্লাহ বলেন,قَالَ يَا بُنَيَّ لاَ تَقْصُصْ
رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْداً إِنَّ الشَّيْطَانَ
لِلإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ‘তিনি বললেন, বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ
স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহ’লে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইউসুফ ১২/৫)। শয়তানের কুমন্ত্রণার
কারণে মানুষ বিপথগামী হয়। মহান আল্লাহ বলেন,قَالَ رَبِّ بِمَا
أَغْوَيْتَنِيْ لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ
أَجْمَعِيْنَ ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট
করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের
সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব’ (হিজর ১৫/৩৯)। মহান আল্লাহ আরো
বলেন,تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ
لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ
عَذَابٌ أَلِيْمٌ ‘আল্লাহর কসম! আমরা আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের
নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদের কর্মসমূহকে শোভনীয় করে
দেখিয়েছে। আজ সে-ই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি’ (নাহল ১৬/৬৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তোমার পূর্বেকার
সম্প্রদায় সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে)
আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে
কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি
এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হ’ল না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল
এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখাল’ (আন‘আম ৬/৪২-৪৩)।
শয়তানই
মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। মহান আল্লাহ বলেন,اِسْتَحْوَذَ
عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ
الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ ‘শয়তান
তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা
শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)।
শয়তানই মানুষকে সরল-সঠিক পথ থেকে বিপথগামী করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ
الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ
خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ
أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ- ‘সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি
আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার
জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে
আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের
অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৬-১৭)।
এজন্য মহান
আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; বরং সর্বদা তার বিরোধিতা করতে
বলেছেন। কারণ শয়তানই মানুষের চির দুশমন। মহান আল্লাহ বলেন,يَا بَنِي آدَمَ
لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ
الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا
إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا
جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاء لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ ‘হে আদম
সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি
পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলে
নিয়েছিল যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। সে ও তার দল
তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা
শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)। যে
ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে সে শয়তানেরই সহচর হয়ে যাবে এবং সে ঈমান
শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ
نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ
لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم
مُّهْتَدُوْنَ، حَتَّى إِذَا جَاءنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ
بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ- ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর
স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই,
অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ
মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে
শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত
নিকৃষ্ট সঙ্গী সে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৮)।
(৬) দুনিয়া ও তার ফিৎনায় পতিত হওয়া :
মানুষের ঈমান হ্রাসের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় পরোক্ষ কারণ। মানুষ যখন
দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার জীবনের সব কিছুই দুনিয়াকে ঘিরে আবর্ভিত
হয় তখনই সে পরকাল বিমুখ হয় এবং আল্লাহ আনুগত্য করা থেকে দূরে সরে যায়।
ইবাদত-বন্দেগী করে না এবং হারাম-হালাল কিছু বুঝে না, তখনই তার ঈমান কমে
যায়। অতএব যে ব্যক্তি দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তাতেই সন্তুষ্ট থাকে
তার নিকট আল্লাহর আনুগত্য করাটা এবং পরকালমুখী হওয়াটা খুব ভারী মনে হয়।[7]
এজন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,اعْلَمُوْا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِيْنَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي
الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ
نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَاماً
وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌ
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ ‘তোমরা জেনে রাখ,
পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের
প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়। যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল
কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে
পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা
ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاضْرِبْ
لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ
السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيْماً
تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِراً،
الْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ
الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَاباً وَخَيْرٌ أَمَلاً-
‘তাদের
কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা কর। তা পানির ন্যায়, যা আমরা আকাশ থেকে
নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল-সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়।
অতঃপর তা এমন শুষ্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর
উপর শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং
স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের
জন্যে উত্তম’ (কাহফ ১৮/৪৫-৪৬)। মানুষের উচিত পরকালের জন্যই বেশী
বেশী কাজ করা। কারণ এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, যার কোন মূল্য নেই। কিন্তু তারা
পার্থিব জীবন নিয়েই ব্যস্ত, অথচ ইহকাল পরকালের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র
(রা‘দ ১৩/২৬)। শুধু দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পরকাল হারাতে হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং
পার্থিব জীবন নিয়েই তৃপ্ত থাকে ও তার মধ্যেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমাদের
নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন। এসব লোকদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম তাদের
কৃতকর্মের কারণে’ (ইউনুস ১০/৭-৮)। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا مَا لَكُمْ إِذَا قِيْلَ لَكُمُ انفِرُواْ
فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الأَرْضِ أَرَضِيْتُم
بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ قَلِيْلٌ-
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কি
হ’ল যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর পথে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়, তখন তোমরা
মাটি অাঁকড়ে ধর? তোমরা কি পরকালের বিনিময়ে দুনিয়াবী জীবনের উপর রাযী হয়ে
গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার ভোগবিলাস অতীব নগণ্য’ (তওবা ৯/৩৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ،
وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا
بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوْهَا كَمَا
تَنَافَسُوْهَا وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ ‘আল্লাহর কসম! আমি
তোমাদের জন্য দারিদ্রে্যর ভয় করছি না বরং ভয় করছি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া
প্রশস্ত করে দেয়া হবে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত
করে দেয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে, যেমন তারা তা
পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। আর তা তোমাদেরকে আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে,
যেমন তাদেরকে আখিরাত বিমুখ করেছিল’।[8]
বাস্তবে
যদি আমরা দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য করি তাহ’লে বুঝতে পারব যে, দুনিয়া
ক্ষণস্থায়ী। এর কোন মূল্য নেই। মানুষ দুনিয়াতে একা এসেছে। আবার তাকে একা
চলে যেতে হবে পরকালের স্থায়ী জীবনে। আর পরকালের জীবনই আসল জীবন। তাই যারা
পরকালে নাজাত পাবে তারাই সুখময় স্থান জান্নাত লাভ করবে। আর আল্লাহর সাক্ষাৎ
লাভে ধন্য হবে। অতএব পরকালীন জীবনকে সবার উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহান
আল্লাহ বলেন, وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও
স্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৭)। মানুষের টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, পরিবার,
সন্তান-সন্ততি নিয়ে যতই আরাম-আয়েশে থাকুক না কেন, যদি আমল না থাকে, পরকালের
জন্য পাথেয় সঞ্চয় না করতে পারে, তাহ’লে তার জীবনের কোন মূল্য নেই; বরং
পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
(৭) অসৎ সঙ্গ :
যখন কোন ব্যক্তির সঙ্গী অসৎ হয় তখন তাকেও অসৎ পথে চলার পথ দেখায়। আর সৎ
ব্যক্তি সঙ্গী হ’লে তাকেও ভাল পথে চলার জন্য বলে থাকে। ফলে অসৎ সঙ্গী ঈমান
কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সৎ নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার
চেষ্টা করা এবং ভাল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য। যেমন
রাসূলুলাহ (ছাঃ) বলেন,الْمَرْءُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ
أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। অতএব তোমাদের
লক্ষ্য রাখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’।[9]
যে
কোন ব্যক্তি বন্ধু নির্বাচন করার পূর্বে অবশ্যই যেন সে লক্ষ্য করে তার
দ্বীনের প্রতি, আমানতের প্রতি, আক্বীদার প্রতি। যদি দেখতে পায় যে, তার
দ্বীন-ধর্ম, আমানতদারী, সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী হয় তাহ’লে তাকে বন্ধু
হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), তাঁর ছাহাবীগণের এবং
সালাফে ছালেহীনের প্রতি লক্ষ্য করি। আর তাঁদের মত জীবন গড়ি। পক্ষান্তরে
ফেরাঊন, নমরূদ, হামানের মত যারা তাদের থেকে সাবধান হই। অতএব যে সৎ
ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তার ফল পাবে। আর যে অসৎ ব্যক্তিকে
বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে সেদিকেই যাবে যেদিকে তার বন্ধু যাবে।[10]
হাফেয আব্দুল মতীন
লিসান্স ও এম.এ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. তাফসীর ইবনে কাছীর ২/২৬২।
[2]. তাফসীর ত্বাবারী ৮/৯০।
[3]. মুসলিম হা/২৩৩।
[4]. বুখারী হা/৫৯৭৬।
[5]. বুখারী হা/৪৪৭৭।
[6]. বুখারী হা/২৭৬৬।
[7]. ইবনুল কাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃঃ ১৮০।
[8]. বুখারী হা/৬৪২৫।
[9]. তিরমিযী হা/২৩৭৮; আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩; মিশকাত হা/৫০১৯; সিলসিলা ছাহীহাহ, হা/৯২৭।
[10]. আবু সোলায়মান আল-খাত্বাবী, আল-উযলাহ, পৃঃ ৫৬; যিয়াদাতুল ঈমান ওয়া নুকছানিহি, পৃঃ ২৭২।